মকবুল হোসেন তালুকদার :
আমার বন্ধু মনি ঘোষ একজন বীর মুক্তি যোদ্ধা। স্বাধীনতার পর সে একজন মুসলমান মেয়েকে ভালবেসে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে নিজের নাম মনি ঘোষ থেকে মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম নাম ধারন করে মেয়েটিকে বিয়ে করে। যার কারনে তাঁর পরিবার তাকে তেজ্যপুএ বা ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম বা হিন্দু সমাজ থেকে বহিস্কার করে।ধর্মীয় আদর্শ ও আচার আচরন ত্যাগ বা পরিবর্তন করায় যদি মনি ঘোষ আর হিন্দু সমাজে থাকতে না পারে, তবে যে সব মুক্তিযোদ্ধা আদর্শিক পিতা জাতির জনক বংবন্ধুকে ত্যাগ করে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানায়, যারা দেশপ্রেমের অমর শ্লোগান জয় বাংলাকে ত্যাগ করে নারী নির্যাতনের শ্লোগান জিন্দাবাদে দীক্ষা গ্রহন করে এবং যারা ‘৭১’এক মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠনকারী, ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যাকারী, স্বাধীনতাকামী বাঙালীদের বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগকারী ও মানবতা বিরোধী রাজাকার,আল-বদর, আল-শামস, জামাত-শিবিরের সাথে জোট বদ্ধ হয়ে নির্বাচনী সখ্যতা ও তাদেরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে; তারা কি মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেন?
প্রসংগত উল্লেখ্য যে সমাজ বিজ্ঞানীগনের মতে রাজাকার’রা কখনোই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনা; তবে মুক্তিযোদ্ধাগন চারিএিক স্খলন জনিত কারনে রাজাকারের তালিকায় নাম লেখাতে পারেন।উদাহরন হিসাবে উল্লেখ্য যে, ১৭৫৭ সালে মীর জাফর আলী খাঁ নবাব সিরাজদৌলার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার কারনে আজ অবধি বিশ্বাস ঘাতকদেরকে মীর জাফর বলে গালি দেয়া হয়।যেমন, খন্দকার মোস্তাককে বিশ্বাস ঘাতক মীর জাফর বলে গালি দেয়া হয়।
আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বংগবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। আমাদের আদর্শিক পিতা জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান; আমাদের ভাষা জয় বাংলা; আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্হানি হায়েনা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা এবং একই সাথে বংগবন্ধুকে পাকি কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা; আমাদের কাজ ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি মা-বোনদের ইজ্জত-সমভ্রম রক্ষা করা;মুক্তিকামী বীর জনতার জান মাল রক্ষা করা।আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্হানি হায়েনা বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস,জামাত মুসলিমলীগ এবং তাদের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত শান্তি কমিটি। তাদের কাজ ছিল পাকি হায়েনাদের সাথে জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়ে দেশপ্রেমিক বাঙালি হত্যা, জিন্দাবাদ বলে মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠন করা,জিন্দাবাদ বলে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের বাডী ঘরে আগুন দেয়া। আর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা “জয় বাংলা”বলে আগুন নেভাতাম, জয় বাংলা বলে মা বোনের ইজ্জত রক্ষা করতাম।তাই আমার মতে জিন্দাবাদ শব্দটি নারী নির্যাতন, মানুষ হত্যা ও জ্বালাও পোড়াও বা ধংসের শ্লোগান; অপর দিকে “জয় বাংলা” শব্দটি হলো পুর্ব বাংলার স্বাধীনতা; মাবোনদের ইজ্জত-সমভ্রম রক্ষা করা এবং মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে দেশপ্রেম ও মানবতার পক্ষের শ্লোগান।
মুক্তি যুদ্ধ হয়েছে জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষন ও ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষনা ও নির্দেশে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির সাথে শোষক পাকিস্হানী হায়না ও বাঙালি জাতির দুশমন গোলাম আযমের নেতৃত্বে রাজাকার, আল বদর আল সামস নামক জাতীয় বেইমানদের বিরুদ্ধে; যারা পাকিস্হানকে রক্ষার নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রতিহত করা। এই যুদ্ধে পাকি হায়েনা ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, জামাত মুসলিমলীগ এবং তাদের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত শান্তি কমিটি দুই লক্ষ মাবোনের ইজ্জত লুন্ঠন ও স্বাধীনতার পক্ষ সমর্থনকারী এিশ লক্ষ বাঙালিদেরকে হত্যা করে।মুক্তিযুদ্ধে পাকি হায়েনা ও তাদের দোসর গোলাম আযমের অপচেষ্টা ব্যর্থ করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। মুক্তি যুদ্ধে পরাজিত গোলাম আযম পাকিস্হানে পালিয়ে গিয়ে বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে এবং এরই অংশ হিসাবে দেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি থেকে বিচ্যুত কিছু সংখ্যক বিভ্রান্ত ও ক্ষমতালিপ্সু তথাকথিত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভ্রান্ত আদর্শ এবং তাদের কর্তৃক গঠিত গনবাহিনীর মাধ্যমে হত্যা, লুটতরাজ, ব্যাংক ডাকাতি, পুলিশ ফাঁড়ি লুট, পাটের গুদামে আগুন ইত্যাদি অরাজক ও অবৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশে এক ভয়াবহ অরাজক পরিস্হিতির সৃষ্টি করে জাতীয় বেইমান গোলাম আযমের চক্রান্তকে সহায়তা করে।আর এই সুযোগে বিশ্বাস ঘাতক মুস্তাক ও খুনি জিয়া ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে বাংলাদেশকে পাকিস্হানের আজ্ঞাবহ রাষ্ট্রে পরিনত করে। এতদভিন্ন খুনী জিয়া বীর বাঙালিদেরকে পাকিস্হানী আদলে বাংলাদেশী, বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশ এবং বংগবন্ধু হত্যার বিচার রোধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ক্ষমতায় আসীন হয়।
দু:খজনক হলেও সত্য যে খুনি জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বটে; তবে জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্হপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বংগবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা ও হত্যার বিচার রোধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী; বাঙালী জাতির দুশমন গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব প্রদান, নিষিদ্ধ ঘোষিত যুদ্ধাপরাধীদের দল মুসলিম লীগ জামাতকে রাজনীতি করার অধিকার প্রদান ও তাদেরকে পুনর্বাসন এবং দেশ প্রেমের জাগরনি শ্লোগান” জয় বাংলা” ত্যাগ করে পাকিস্হানী ভাব ধারার জিন্দাবাদের আদর্শ গ্রহন; বাঙালি জাতীয়তাবাদকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন; বাংলাদেশ বেতারকে পাকিস্তানী ভাবাদর্শে রেড়িও বাংলাদেশে রুপান্তর এবং money is no problem ঘোষনা দিয়ে বাংলাদেশকে ঘুষ দুর্নীতির অভয়াশ্রমে পরিনত করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি অকার্যকর দেশে পরিনত করে মুক্তি যোদ্ধার চরিএ হারিয়েছে and now a days he is no more freedom fighter.
*যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষিবিদ
*ই-মেইল: maqbul.talukder52@gmail.com
Leave a Reply