শীতকালীন দেশীয় তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজের চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মেহেরপুরে অনেক কৃষক। গ্রামাঞ্চলে এই পেঁয়াজকে মুড়িকাটা বা ঢ্যামনা পেঁয়াজ বলে থাকে। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে ভরা মৌসূমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমাদানি হওয়ায় লোকসানের মুখে চাষিরা। এবারও দাম না থাকায় পেঁয়াজ উত্তোলন করতে পারছেন না তারা। সংরক্ষণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ এমনটি জানিয়েছে কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের দাবি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে চাষিরা।
মেহেরপুরে প্রতিটি মাঠে চোখ তুলে তাকালেই দেখা যায় শুধুই পেঁয়াজের চাষ। পেঁয়াজের দাম না থাকায় দফায় দফায় উত্তোলনের করছে কৃষকেরা। কিন্তু আশানারুপ দাম না থাকায় জমি থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারছেন না তারা। কৃষকেরা বলছেন আর কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজ উত্তোলন করতে না পারলে মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হবে। তাদের অভিযোগ প্রতি বছরই ভরা মৌসূমে বাইরের দেশ থেকে প্রচুর পারমান পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। যার প্রভাব পড়েছে এ জেলায়। বিঘা প্রতি জমিতে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে পেঁয়াজ আবাদে। গেল বছরে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো ২ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে, আর চলতি বছরে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩শ ২০ হেক্টর জমিতে।
জানা যায়, করোনার সময় পেঁয়াজের দাম ছিলো অনেক বেশি। এই জন্য শীতাকলীন পেঁয়াজ চাষ করার সময় বেশি দাম দিয়ে বীজ ক্রয় করতে হয়েছে। শীতকালীন পেঁয়াজ আমরা বাজারে তুললে কম দামে দিতে হচ্ছে । এতে চাষ খরচ তো হচ্ছে না লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
কথা হয় স্থানীয় কৃষক আমজাদ হোসেনের সাথে, তিনি বলেন, আমার মোট ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ করেছি শীতকালীন মৌসুমে। এই পেঁয়াজ নিয়ে আমরা লোকসানের সম্মুখে আছি। শুনছি সরকার পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এই আমদানীর কারণে আমাদের পেঁয়াজ মার খেয়েছে। দেড় বিঘা পেঁয়াজ আপাতত তুললাম, এতে প্রায় আমার চল্লিশ হাজার টাকার ক্ষতি হবে।
মেহেরপুর গ্রামের কৃষক সোলায়মনা লাভের আসায় এবার সাড়ে ২০ বিঘা জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। বেশী টাকা দরে বীজ কিনে খরচ করেছে পেঁয়াজ চাষে। দাম ভালো দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। তার মত একই অবস্থা মেহেরপুরের শত শত কৃষকের। তিনি জানান, প্রতি বছরই পেঁয়াজ আবাদ করি। ৮ বিঘা ১০ বিঘা করে প্রতি বছরই পেঁয়াজ আবাদ করি। গত বছর আমি ১৪ বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম। খুব ভালো হয়েছিল, সে কারণে আমি এবার ২০ বিঘা পেঁয়াজের আবাদ করেছি। বর্তমানে পেঁয়াজের যে দাম, এই দাম থাকলে এবার মার্ডার হয়ে যাব। সরকার যদি এলসি অর্থাৎ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী বন্ধ করে তাহলে আমরা এই পেঁয়াজের দাম ভাল পাব। চারটি মাস এই আমদানি বন্ধ করলে আমার মত কৃষকেরা বাঁচবে। ধারদেনা করে এই আবাদ করা। ভালো দাম পাওয়ার আশায়।
কৃষক করিম মিয়া জানান, আমাদের গ্রামের ৯৫ ভাগ মানুষ পেঁয়াজের চাষ করে। বর্তমানে যে বাজার পরিস্থিতি। এক বিঘা জমিতে ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিঘা প্রতি লস। খরচ খরচা দিয়ে ১ কেজি বীজ কেনা পড়ে ১১০ টাকা কেজি। এক বিঘা বীজ রোপন করতে বীজ লাগে ৮ মণ।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, মেহেরপুর জেলার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে সব ধরনের ফসল হয়ে থাকে। আমাদের বর্তমান সময়ে পেঁয়াজের আবাদ খুব ভালো হয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২৫ হেক্টর। এ বছরে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে। আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এটি আমরা অর্জন করেছি। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা ছিল আমাদের পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে। যেহুতু প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫ লাখ মেট্রিক টণ কিন্তু আমাদের উৎপাদন হয় ২৫ লাখ মেট্রিক টণ।
সারা দেশে এ জাতের পেঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকদের লোকসানের কথা মাথায় রেখে পেঁয়াজটি সংরক্ষণের জন্য গবেষনা অব্যহত আছে বলেও দাবি এ কৃষি কর্মকর্তার।
Leave a Reply